তুষারাবৃত শৃঙ্গ, নদীর উপরে দুধের সরের মতো বরফের আস্তরণ, শ্বেতশুভ্র উপত্যকা— সেই রূপের তুলনা হয় না। যে দিকে চোখ যায়, যেন সাদা-কালোর জগত।
মৌসুম বদলের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায় উপত্যকা রূপ। কে যেন অদৃশ্য টানে সরিয়ে দেয় তুষার-চাদর। ধীরে ধীরে প্রাণ পায় সবুজ। মাথা দোলাতে থাকে পুষ্পরাশি। বরফের মরসুম শেষ। এ বার সময় ফুলের। প্রকৃতির সেই অনন্য শোভা প্রত্যক্ষ করতে চলুন সিকিমের ‘ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স’-এ।
গরমের সময় ফুল ফোটে উত্তরাখণ্ডের পার্বত্য উপত্যকায়। ব্রহ্মকমলের টানে দূরদূরান্ত থেকে পর্যটকেরা ছুটে যান সেখানে। ‘ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স’ বললে তাই সকলেই বোঝেন উত্তরাখণ্ড। তবে ফুলের জলসা দেখতে সে রাজ্যে যদি পাড়ি দিতে না পারেন, তবে চলুন উত্তর সিকিমের ইয়ুমথাং উপত্যকায়।
সিকিমের মঙ্গন জেলার পাহাড়ি জনপদ লাচুং। গ্যাংটক থেকে দূরত্ব ১৫০ কিলোমিটারের মতো। গাড়িতে ঘণ্টা পাঁচ-ছয়েকের মতো সময় লাগে। লাচুং ঢোকার আগেই রয়েছে চুংথাম। সেখান থেকে একটি রাস্তা গিয়েছে লাচুং, অন্যটি লাচেন হয়ে গুরুদোংমার হ্রদ। ইয়ুমথাং ভ্যালি এবং জিরো পয়েন্ট ঘুরতে হলে থাকতে হবে লাচুংয়ে। ইয়ুমথাং যেন এককথায় রূপকথার রাজ্য। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, শীত, বসন্তে তার রূপ বদলায়। জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারিতে তুষার ঢাকা উপত্যকার সৌন্দর্য নয়নাভিরাম। তবে বসন্তেও সেই রূপ কিছু কম নয়। উপত্যকা জুড়ে ফুটে ওঠে রঙিন ফুল।
প্রবল ঠান্ডার পাহাড়ি জনপদে গরমেও তাপমাত্রাও বিশেষ চড়ে না। ফলে এপ্রিল, মে মাস এখানে মনোরম। লাচুং থেকে গাড়িতে ইয়ুমথাং ভ্যালি ঘণ্টাখানেকের পথ। আকাশছোঁয়া পাহাড়, মেঘ-রোদের লুকোচুরি, বয়ে চলা পাহাড়ি নদী, চড়ে বেড়ানো চমরি গাই আর রঙিন ফুলের সমারোহ এই নিয়েই উপত্যকার রূপ।
এখানেই রয়েছে সিংবা রডোডেনড্রন স্যানচুয়ারি। সুমদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১১ হাজার ৮০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই উপত্যকার আনাচ-কানাচে অবশ্য এখনও পর্যটকেরা ঘোরেন না। আসলে উচ্চতা এবং প্রবল ঠান্ডার জন্য এখানে শীতের মৌসুমে সে ভাবে পায়ে হেঁটে ঘোরা যায় না। তবে গরমে সেই সুযোগ কিছুটা মিলতে পারে। এপ্রিল থেকেই ফুল ফোটা শুরু হয়। পপি, আইরিশ, প্রিমরোজ, লাউসওর্টস ইত্যাদি অসংখ্য ফুল ফোটে এখানে। ফোটে নানা রকম রডোডেনড্রনও।
ইয়ুমথাং থেকে আরও ঘণ্টা খানেক এগোলে জিরো পয়েন্ট। উচ্চতা প্রায় ১৫, ৩০০ ফুট। অত্যধিক উচ্চতার জন্য এখানে অবশ্য ফুলের দেখা মেলে না। জিরো পয়েন্ট পর্যন্তই যাওয়ার সুযোগ পান পর্যটকেরা, তা-ও অনুমতি সাপেক্ষে।
ফুল দেখার সেরা সময়: ইয়ুমথাং-এ ফুল দেখতে গেলে আসতে হবে এপ্রিলের শেষে। মোটমুটি জুন মাস পর্যন্ত ফুল ফুটে থাকে।
কী ভাবে আসবেন: হাওড়া বা শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন। সেখান থেকে গাড়িতে গ্যাংটক। গ্যাংটক হয়ে গাড়িতে লাচুং আসতে হয়। শিলিগুড়িতে বাগডোগরা বিমান বন্দর এবং সিকিমের পেকিয়াং বিমানবন্দর রয়েছে। সেখান থেকে সড়ক পথে গ্যাংটক হয়ে আসা যায়। লাচুং থাকার জন্য রয়েছে হোম স্টে। লাচুং থেকে গাড়ি নিয়ে কয়েক ঘণ্টায় ইয়ুমথাং এবং জিরো পয়েন্ট ঘুরে লাচুং ফিরে আসেন পর্যটকেরা । ইদানীং অবশ্য এক, দু’টি থাকার জায়গা তৈরি হয়েছে ইয়ুমথাংয়ের কাছাকাছি।
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :