নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার মো: সাজ্জাদ হোসেন, প্রতিদিন ১২৩ টি ফেসবুক মেসেঞ্জার গ্রুপের মাধ্যমে প্রায় ৩৫ লাখ ট্রেন যাত্রীদের ফ্রি সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ট্রেনের আপডেট দিয়ে এই সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তার মুখস্থ রয়েছে দেশের সব ট্রেনের নাম, রুট ও আসা যাওয়ার সময়।
২০১৪ সাল থেকে এই ফ্রি সেবার মাধ্যমে ট্রেন যাত্রীদের মনে ভালোবাসার স্থান দখল করে নিয়েছেন তিনি। এভাবেই ভালোবাসায় সিক্ত হচ্ছেন প্রতিদিন। সাজ্জাদ হোসেন ছাড়াও ফেসবুক মেসেঞ্জার গ্রুপের মাধ্যমে স্বেচ্ছায় ফ্রি সেবা দিয়ে যাচ্ছেন আরো অনেকে। কিন্তু তাদের তুলনায় সবচেয়ে বেশি ট্রেন যাত্রীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
সরেজমিনে রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায় তিনি এক হাতে মোবাইলে ক্লিক করে ট্রেনের আপডেট দিচ্ছেন আরেক হাতে খাবারও খাচ্ছেন যেন তার ব্যস্ততার শেষ নেই। নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মতো। ট্রেন যাত্রীদের সেবা করতে পেরে কখনো বিরক্তির ছাপ তার মধ্যে লক্ষ করা যায়নি।
ট্রেন যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, রেলস্টেশনে কিছু স্টেশন মাস্টার রয়েছে তাদের কাছে যাত্রীরা ট্রেনের আপডেট একবারের বেশি জানতে চাইলে বিরক্তিকর মনে করে কিন্তু সাজ্জাদ হোসেন তার ব্যতিক্রমী। ট্রেন যাত্রীরা বাসা, অফিস ও অন্যান্য স্থান থেকে বের হওয়ার আগেই ফেসবুক মেসেঞ্জার গ্রুপের মাধ্যমে ট্রেনের অবস্থান জানতে পারছে। তার এই ফ্রি সেবামূলক কাজের অনুপ্রেরণায় আরো অনেকেই এগিয়ে এসেছে, তারাও ফ্রি সেবা দিয়ে যাচ্ছেন দিনের পর দিন দিন। আর এভাবেই লাখ লাখ মানুষ ফ্রি সেবা পাচ্ছেন। সহজ হচ্ছে ট্রেন যাত্রীদের যাতায়াত।
নরসিংদী থেকে ঢাকা আসা যাওয়া করে অফিস করেন আবু বকর সিদ্দিক। তিনি জানান, ভোরে ঘুম থেকে উঠেই ফেসবুক মেসেঞ্জার গ্রুপে ট্রেনের আপডেট দেখি। ট্রেন কোথায় আছে আর কখন রেলস্টেশনে গেলে ট্রেন পাওয়া যাবে এমন খবরটি পেয়ে থাকি সাজ্জাদ হোসেনের কাছ থেকে। এতে সঠিক সময়ে রেলস্টেশনে পৌঁছে গিয়ে ট্রেন ধরতে পারি। আর ঘর বসেই তার মাধ্যমে এই সেবা পাচ্ছি।
গাজীপুর থেকে প্রতিদিন আসা যাওয়া করে অফিস করেন মো: আশরাফুল ইসলাম। তিনি জানান, আমাদের এখন আর রেলস্টেশন মাস্টারের কাছে গিয়ে ট্রেন আসা যাওয়ার খবর জানতে হয় না। আমরা নিজেরাই ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার গ্রুপ গুলোর মাধ্যমে ট্রেন আসা যাওয়ার খবর জানতে পারি। সবাই কম বেশি ট্রেনের খবর দিয়ে থাকি। কিন্তু সাজ্জাদ হোসেন সবার চেয়ে বেশি ট্রেন আসা যাওয়ার খবর পৌঁছে দেন আমাদের। আর এভাবেই আমাদের ভালোবাসা অর্জন করেছেন তিনি।
সাজ্জাদ হোসেন জানান, আমি ২০০৮ সাল থেকেই ট্রেনে আসা যাওয়া করি। সেই সময়ে রেলস্টেশনে এসে ঘন্টার পর ঘন্টা ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে। কারণ অনেক সময় দেখা গেছে সঠিক সময়ে স্টেশনে ট্রেন পৌঁছত না। আর এই ধারণা থেকে রেলস্টেশনে বিলম্বে পৌঁছার কারণে ট্রেন অনেক সময় পেতাম না। এভাবেই চলতে থাকে বছরের পর বছর। ২০১৪ সালে এসে আমরা কয়েকজন মিলে ফেসবুক মেসেঞ্জার গ্রুপ চালু করি। পরে আমাদের ট্রেন চলাচলে বিড়ম্বনা ও দুর্ভোগ কমতে থাকে। ঘরে, অফিসে ও রাস্তায় থেকেই ট্রেনের খবর জানতে পারছি। এখন ১২৩টি মেসেঞ্জার গ্রুপের মাধ্যমে আমি প্রায় ৩৫ লাখ ট্রেন যাত্রীদের মাঝে একদম ফ্রি সেবা পৌঁছে দিচ্ছি। মানুষের সেবা করাটা যেন এখন নেশায় পরিনত হয়েছে। কারণ এতে আমি লাখ লাখ মানুষের ভালোবাসা পাচ্ছি।
একুশে সংবাদ/স.র.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :