দার্জিলিংয়ের যেমন একটি নিজস্বতা আছে, ঠিক তেমনই রয়েছে তার আশপাশের পাহাড়ি গ্রামগুলিরও। সুউচ্চ পাইন, পাহাড় ঘেরা সেই গ্রামগুলিতে এক দশক আগেও সে ভাবে পর্যটকদের আনাগোনা না থাকলেও, এখন বদলেছে সেই চিত্র। দার্জিলিং বললেই যেমন চোখের সামনে ভেসে ওঠে ম্যাল, ঘোড়ার আনাগোনা, কেভেন্টার, গ্লেনারিজের কেক, ইংরেজি প্রাতরাশ, টয় ট্রেনের বাঁশি, হইচই, দোকানপাট, ঠিক তেমনই পাহাড়ি গ্রামগুলি মনে করায় একেবারেই অন্য ছবি।
প্রকৃতি যেন মনের মধ্যে এসে জাহির করে নিজেকে। ঝাঁ চকচকে দোকান নেই, দেশ-বিদেশের কুইজিন নেই, কোলাহল নেই। তবু এমন কিছু আছে, যার উপস্থিতি টের পান অনেকেই। আছে, শব্দ, বর্ণ, রূপবদলের খেলা, মেঘকুয়াশার লুকোচুরি, কাঞ্চনজঙ্ঘার হাতছানি। আর আছে নিপাট সহজ সরল জীবনযাপন। পাহাড়ি মানুষের মুখের অমলিন হাসি।
এই পাওয়াটুকুর টানেই ঘুরে আসা যায় মহালদিরাম। দার্জিলিং, কার্শিয়াঙের মতো পাহাড়ি শহরগুলি থেকে মহালদিরাম খুব বেশি দূরে নয়। দু’টি দিন যদি দার্জিলিঙের ব্যস্ততা, ম্যালে ঘোরার পর মন হয় আর দু’টি দিন একটু অন্য রকম কোনও জায়গায় কাটানো যায়, তা হলে বেছে নিতে পারেন এই জায়গা।
জঙ্গল, চা-বাগান আর হাত বাড়ালেই কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা মিলবে এখানে। একটা দিনে নিঃসর্গের মাঝে পাহাড়ি সাদামাঠা খাবার খাওয়া আলস্য ভরে জিরিয়ে নেওয়াই যায়। তবে চাইলে পদব্রজেও এ জায়গা ‘আবিষ্কার’ করতে বেরিয়ে পড়তে পারেন। মেঘকুয়াশার বাড়াবাড়ি না থাকলে এখান থেকে চোখে পড়তে পারে লিস, ঘিষ, তিস্তার বয়ে চলা।
এ গ্রামের বেশির ভাগটা জুড়েই রয়েছে চা বাগান। পিচের প্রলেপ রয়েছে রাস্তায়। বিকেলে হাঁটতে বেরোলে সাক্ষী হতে পারবেন পড়ন্ত প্রকৃতির রূপবদলের।
এখান থেকে ঘুরে নেওয়া যায় অহলদাঁড়া, লাটপাঞ্চার, যোগীর ঘাট, চিমনি গ্রাম। আর যদি গাড়ি নিয়ে অন্য কোথাও যেতে না চান, দিনভর ঘুরে নিতে পারেন চা বাগানের পথে। এত কাছ থেকে চা বাগানে ঘোরার সুযোগ সব জায়গায় মেলে না।
জলপাইগুড়ি থেকে মাটিগাড়ার রাস্তা ধরে গেলে মহালদিরাম পৌঁছতে ঘণ্টা সাড়ে তিন-চার লাগবে। দূরত্ব প্রায় ৬০ কিলোমিটার। বাগডোগরা থেকেও দূরত্ব কম-বেশি ৬০ কিলোমিটারের মতোই। যদি দার্জিলিং ঘুরে যেতে চান, তা-ও সম্ভব। দার্জিলিং থেকে দূরত্ব প্রায় ২৬ কিলোমিটার। কার্শিয়াং থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ি গ্রামটি।
কোথায় থাকবেন?
মহালদিরামে থাকার জন্য একেবারে চা-বাগানের গায়েই রয়েছে হোম স্টে। গ্রামের আনাচ-কানাচে আরও কয়েকটি হোম স্টে পাওয়া যাবে। থাকা-খাওয়া নিয়ে মাথাপিছু খরচ ১২০০-১৫০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে।
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :